জেনে নিন কাজুবাদাম খেলে কি হয়?
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ??? প্রিয় পাঠকবৃন্দ। আশাকরি আপনারা সকলেই ভাল আছেন?
আমাদের আজকের বিষয় হলো, কাজুবাদামের উপকারিতা এবং গুণাবলী সম্পর্কে!
কাজু বাদাম! আমরা অনেকেই কাজুবাদাম কাচা খেতে খুব পছন্দ করি, আবার অনেকে বিভিন্ন ভাবে রান্না করে খেতেও পছন্দ করি ।
আপনি কি জানেন?? কাজুবাদাম খেলে কি হয়। বা এটা খেলে লাভ কি?
যদি না জেনে থাকেন, তাহলে চলুন আজকে জেনে আসি কাজুবাদামের উপকারিতা এবং কিছু গুণাবলী বা কার্যক্ষমতা সম্পর্কে।
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! কাজুবাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, প্রোটিন, ফাইবার, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি।
মজাদার কাজু বাদাম উচ্চ প্রোটিন, আঁশ ও স্বাস্থ্যকর চর্বি সমৃদ্ধ একটি খাদ্য। এছাড়াও এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ উপাদান যা শরীরকে সুস্থ রাখতে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।
কাজু বাদাম মনোআনস্যাচুরেইটেড এবং পলিআনস্যাচুরেইটেড ফ্যাটি অ্যাসিডের একটি ভালো উৎস হওয়াতে লডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে।
কাজু বাদাম পলিফেনল ও ক্যারোটিনয়েড আন্টিঅক্সিডেন্টের একটি ভালো উৎস। কাচার তুলনায় ভাজা বাদামে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ বেশি থাকে। এটি পুষ্টিগুণ এবং শরীরিক উপকারিতা সমৃদ্ধ একটি খাদ্য আর তা হলো কাজু বাদাম। গুণাগুণের দিক থেকে কাজু বাদামের কোনও বিকল্প নেই। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ, প্রোটিন এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। স্বাস্থ্যকর সব খাবারের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এই কাজু বাদাম নিয়মিত খেলে শরীরের নানা রকম সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়।
যেমনঃ অ্যানিমিয়ার মতো রোগের আশংকা কমাতে সাহায্য করে, হাড়কে মজবুত করে,ক্যান্সারের মতো মরণ ব্যাধি দূরে করে,ডায়াবেটিসের মতো ব্যাধি দূর করে,বিভিন্ন প্রকার সংক্রমণের ঝুকি কমায়, হার্টের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে,ওজন কমাতে সাহায্য করে,কোষের ক্ষয় রোধ করে, চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে,
১. অ্যানিমিয়ার মতো রোগের আশংকা কমাতে সাহায্য করেঃ
কাজু বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, যা শরীরে লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদন এতো পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় যে, তা দেহের রক্তস্বল্পতার মতো সমস্যা দূর করে দেয়। সেই সাথে তা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়িয়ে দেয়। তাই অ্যানিমিয়ার মতো রোগের আশঙ্কা কমাতে এই কাজু বাদাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
২. ক্যান্সারের মতো মরণ ব্যাধি দূরে করেঃ
কাজু বাদামের ভেতরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা ক্যান্সার সেলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা সৃষ্টি করে, সেই সাথে টিউমারও যাতে দেখা না দেয় বা আক্রমণ না করে সেদিকেও লক্ষ্য রাখে। এখানে এই মরণ ব্যাধিকে সাপ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টকে বেজির সাথে তুলনা করা যেতে পারে উদাহরন হিসেবে। কাজু বাদামে প্রম্যান্থো-সায়ানিডিন নামে একটি উপাদান থাকে, যার ফলে এই বিশেষ কাজটি সম্ভব হয়।
৩. হাড়কে মজবুত করেঃ
কাজু বাদামে থাকে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং ম্যাগনেসিয়াম। যার ফলে এই বাদামটি নিয়মিত খেলে তা হাড়ের উপর প্রভাব ফেলে, ফলে হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। পরবর্তিতে বৃদ্ধি হওয়ার পরও তা অস্টিওআর্থারাইটিসের মতো হাড়ের রোগ হওয়ার আশঙ্কা অনেক কমিয়ে দেয়। কেননা কাজু বাদামে আছে ভিটামিন-কে, যা হাড়ের জন্য অনেক উপকারি একটি উপাদান।
৪. ডায়াবেটিসের মতো ব্যাধি দূর করেঃ
ডায়াবেটিসের রোগি যদি প্রতিদিন নিয়মিতভাবে এক মুঠো করে কাজু বাদাম খাওয়া শুরু করে, তাহলে তা দেহের ভিতরে এমন কিছু পরিবর্তন আনতে শুরু করে যে, এতে করে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বেড়ে যায়। যার ফলে রক্তে থাকা শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে, এবং তা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়। বিভিন্ন গবেষণায় এটা দেখা গিয়েছে। তাই এই পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে যে, যাদের পরিবারে এই মরণ রোগের ইতিহাস রয়েছে, তাদের নিয়মিত কাজু বাদাম খাওয়ার অভ্যাস করা উচিৎ!
৫.বিভিন্ন প্রকার সংক্রমণের ঝুকি কমায়ঃ
কাজু বাদামে থাকে জিঙ্ক, যার কাজ হলো ভাইরাসের আক্রমণের হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করা। তাই নিয়মিত কাজু খেলে আপনি এই ধরনের ইনফেকশনের হাত থেকে রেহাই পেতে পারেন।
৬. হার্টের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ
কাজু বাদামের প্রধান উপাদান অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা ক্যান্সারের মতো রোগকে দূর করার সাথে সাথে নানারকম হার্টের রোগ থেকে বাঁচাতেও বিশেষ কাজ করে থাকে।
৭. চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেঃ
কাজু বাদামে প্রচুর পরিমাণে কপার রয়েছে। আর এই উপাদানটি হল সেই খনিজ উপাদান যা চুলের সৌন্দর্য বাড়ানোর সাথে সাথে চুলের গোড়াকে শক্ত করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও কাজু বাদামে থাকা কপার শরীরের ভিতরের কিছু এনজাইমের ক্ষরণ বৃদ্ধি করে যা চুলের রংকে কালো রাখতে সহায়তা করে।
৮.ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ
অন্যান্য বাদামে বেশি পরিমাণে ক্যালোরি এবং ফ্যাট থাকে বলে সেগুলো ওজন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তবে গবেষণায় দেখা গেছে যে, কাজু বাদামে যে পরিমাণ ক্যালোরি থাকে, তার ৮৪ শতাংশই হজম করতে এবং শুষে নিতে পারে মানব দেহ। এ ছাড়া এটি প্রোটিন ও ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় ক্ষুধা কমাতে এবং পেটভরা রাখতে সহায়তা করে বলে ওজন কমার সম্ভাবনা থাকে অনেক।
৯.কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে:
দুই ধরনের কোলেস্টেরলের মধ্যে রয়েছে ‘এলডিএল’ ও ‘এইচডিএল’। এলডিএল, ধমনীতে ক্ষতিকারক চর্বি জমাট বাঁধায় এবং এইচডিএল এই ক্ষতিকারক চর্বি এলডিএলকে যকৃতের দিকে বহন করতে সাহায্য করে।
১০.কোষের ক্ষয় রোধ করে:
বাদাম ও বীজ উপকারী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ‘ফ্রি র্যাডিকেল’য়ের কারণে হওয়া দেহের ক্ষতি কমায়।
বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা কাজুবাদাম কে এক প্রকার প্রাকৃতিক ভিটামিন ট্যাবলেট বলে থাকেন।
কেও যদি প্রতিদিন নিয়মিত এক মুঠো করে কাজু বাদাম খাওয়ার অভ্যাস করে, তাহলে তা শরীরের পুষ্টিকর উপাদানের ঘাটতি দূর করে, সেই সাথে পাওয়া যায় আরও অনেক উপকার, প্রচুর গবেষণার দ্বারা এটা প্রমাণিত হয়েছে।
কাজু বাদাম খাওয়ার সঠিক নিয়মঃ
কাজু বাদাম খাওয়ার উপকারিতা অনেক। তাই এটি সকলকেই নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস করা উচিৎ। তবে কিভাবে বা কি নিয়মে খাবেন সেটাও তো জানা দরকার?এর জন্য প্রথমে আপনাকে ঠিক করতে হবে আপনি কেন খাবেন? এবং কখন খাবেন?
যদি আপনি ডায়েট এর জন্য খেতে চান, তাহলে সকালের নাস্তার পর এবং দুপুরের খাবারের আগের সময়, যেমন- ১১.০০–১.০০ টার মধ্যে একমুঠ বাদাম খেতে পারেন। আবার বিকালেও যখন হালকা ক্ষুধা লাগবে তখন নাস্তা হিসাবে অন্য খাবার না খেয়ে একমুঠ কাজু বাদাম ৪.০০–৫.৩০ টার মধ্যেও খেতে পারেন। এতে ক্ষুধাও চলে যাবে সেই সাথে আপনার ডায়েটও ঠিক থাকবে।
আর যদি ডায়েট ছাড়া যদি অন্য কোন কারণে খেতে চান, তাহলে ১০–১২ টি বাদাম রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে তা খেয়ে নিবেন।
বিশেষ সর্তকতাঃ
অতিরিক্ত মাত্রায় কাজু বাদাম খাওয়া যাবে না। অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে কিন্তু শরীরের উপকারের পরিবর্তে অপকারটা বেশি হবে। কারণ এর উপাদান গুলো বেশি মাত্রায় শরীরে যেতে থাকলে তা উল্টো ফল হতে শুরু করে। তাই কাজু বাদাম সবসময় পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে, তবেই এর সুফল পাওয়া যাবে।
সারা বিশ্বে কাজু বাদাম সাধারণত কাঁচা অবস্থাতেই বেশি বিক্রি করা হয়। তবে এটি কাঁচা অবস্থায় না খাওয়াই নিরাপদ। কারণ কাঁচা অবস্থায় এতে উরুশিওল নামে একটি বিষাক্ত পদার্থ থাকে এবং এটি মানুষের ত্বকে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। ওজন কমাতে পারে: ওজন কমাতে চাইলে কাজু বাদাম খাওয়া যেতে পারে, এটা কম ক্যালরি ও উচ্চ চর্বি-জার।তীয় খাবা
কাজু বাদাম অতি সুস্বাদ হলেও এতে অন্যান্য বাদামের তুলনায় চর্বি ও ক্যালরি কিছুটা কম। এক পরিবেশন কাজু বাদামে গড়ে ১৩৭ ক্যালরি থাকে।
স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, হৃদরোগ ইত্যাদি সৃষ্টিকারী চর্বি ‘ট্রাইগ্লিসারাইড’য়ের মাত্রা কমাতে কাজু বাদাম সহায়তা করে।
তবে, লবণযুক্ত কাজুবাদাম না খাওয়া ভালো, এতে রক্তচাপ বাড়ে।
‘জার্নাল অব নিউট্রিশন’য়ের করা একটি পরীক্ষা থেকে জানা গিয়েছে যে, কেউ যদি টানা ১২ সপ্তাহ ধরে লবণ ছাড়া কাঁচা কাজু বাদাম ৩০ গ্রাম করে খাই। তাহলে তার টাইপ ২ ক্যাটাগরির ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে যায়। এছাড়াও এটা হৃদরোগ, রক্তচাপ কমাতে, এবং ‘এইচডিএল’য়ের মাত্রা বাড়াতে সহায়তা করে।
কাজু বাদাম মনোআনস্যাচুরেইটেড এবং পলিআনস্যাচুরেইটেড ফ্যাটি অ্যাসিডের ভালো উৎস হওয়াতে লডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে।
কাজু বাদাম পলিফেনল ও ক্যারোটিনয়েড আন্টিঅক্সিডেন্টের ভালো উৎস। কাচার তুলনায় ভাজা বাদামে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ বেশি থাকে।
প্রিয় পাঠকবৃন্দ? যদি আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগে থাকে! তাহলে অবশ্যই আপনাদের মূল্যবান মতামতটি কমেন্ট বক্সে জানাবেন এবং বেশি বেশি শেয়ার করবেন।
0 Comments