আসসালামু আলাইকুম ওরাহমাতুল্লাহ??? সুপ্রিয় বন্ধুগণ। আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় হলো ছোলার পুষ্টিগুণ এবং তার উপকারিতা সম্পর্কে। প্রিয় বন্ধুগণ ছোলা আমাদের অনেকেরই প্রিয় খাদ্য ।আমরা অনেকেই রান্না ছোলা খেতে অনেক ভালবাসি। ছোলার অনেক গুণাবলী এবং ভালো দিক রয়েছে এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন,ভিটামিন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, খনিজ লবণ, মাইক্রোগ্রাম এবং প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি-১ ও বি-২ আছে। এছাড়া আরো অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে এবং ছোলা আমাদের শরীরের অনেক রোগ ব্যাধি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।যেমন: ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে, হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে, হাড় শক্ত করে, রক্তের চর্বি কমাতে সাহায্য করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, অস্থির ভাব দূর করে, শরীরের জ্বালাপোড়া কমায়, মেরুদণ্ডের ব্যথা দূর করে। কাঁচা ছোলার গুণ সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যপোযগী ছোলায় আমিষ প্রায় ১৮ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট প্রায় ৬৫ গ্রাম, ফ্যাট মাত্র ৫ গ্রাম, ২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ‘এ’ প্রায় ১৯২ মাইক্রোগ্রাম এবং প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি-১ ও বি-২ আছে।
এছাড়াও ছোলায় বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন, খনিজ লবণ, ম্যাগনেশিয়াম ও ফসফরাস রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে আরও অনেক উপকার।
উচ্চমাত্রার প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার ছোলা। কাঁচা, সেদ্ধ বা তরকারি রান্না করেও খাওয়া যায়। কাঁচা ছোলা ভিজিয়ে, খোসা ছাড়িয়ে, কাঁচা আদার সঙ্গে খেলে শরীরে একই সঙ্গে আমিষ ও অ্যান্টিবায়োটিক যাবে। আমিষ মানুষকে শক্তিশালী ও স্বাস্থ্যবান বানায়
আর অ্যান্টিবায়োটিক যেকোনো অসুখের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। ছোলার কিছু চমকপ্রদ গুণাগুণ হল- ছোলা পুষ্টিকর একটি খাদ্য । এটি মলিবেডনাম এবং ম্যাঙ্গানিজ এর চমৎকার উৎস। ছোলাতে প্রচুর পরিমাণে ফলেট এবং খাদ্য আঁশ আছে সেই সাথে আছে আমিষ, ট্রিপট্যোফান, কপার, ফসফরাস এবং আয়রণ।
বেশি পরিমাণ ফলিক এসিড খাবারের সাথে গ্রহণের দারা নারীরা কোলন ক্যান্সার এবং রেক্টাল ক্যান্সার এর ঝুঁকি থেকে নিজিদেরকে মুক্ত রাখতে পারেন। এছাড়া ফলিক এসিড রক্তের অ্যালার্জির পরিমাণ কমিয়ে এ্যজমার প্রকোপও কমিয়ে দেয়। আর তাই নিয়মিত ছোলা খান এবং সুস্থ থাকুন।
আমাদের দেশে ছোলার ডাল নানাভাবে খাওয়া হয়। এটা দেহকে করে দৃঢ়, শক্তিশালী, হাড়কে করে মজবুত, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এর ভূমিকা অপরিহার্য। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম।
ছোলার কিছু বিশেষ গুনাবলি1.কোলেস্টেরল কমায়: সুস্থ থাকতে হলে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ কোলেস্টেরল বেশি থাকার কারণে দেখা দিতে পারে হৃদরোগ, শারীরিক স্থূলতা, স্ট্রোক ইত্যাদিসহ অনেক দূরারোগ্য ও প্রাণঘাতি রোগ। আর ছোলায় থাকা দ্রবণীয় ভোজ্য আঁশ এখানেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ন। শরীরের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে ওই ভোজ্য আঁশ, যা পক্ষান্তরে কমায় কোলেস্টেরল। এবং বেশি পরিমাণে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট ছাড়া ছোলায় আরও আছে বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ লবণ।
2. হজমে সহায়তা করে: হজমক্রিয়া সহজ করার জন্য আবশ্যক একটি উপাদান হল ভোজ্য আঁশ। আর এই ভোজ্য আঁশের অভাব সারা বিশ্বজুড়ে একটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা। ছোলা সেই ভোজ্য আঁশের ঘাটতি পূরণে অনন্য একটি খাবার।উচ্চমাত্রায় ‘র্যাফিনোজ’ নামক দ্রবণীয় ভোজ্য আঁশ আছে ছোলায়। এই উপাদান পেটের খাবার ভাঙে ধীর গতিতে। কারণ একমাত্র স্বাস্থ্যকর ব্যাক্টেরিয়াই ‘র্যাফিনোজ’কে ভাঙতে সক্ষম। মল অপসারণের কষ্ট কমায় এবং তা নিয়মিত করতে সহায়ক ছোলা।
3. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে : ছোলায় খাদ্য-আঁশও আছে বেশ। এ আঁশ কোষ্ঠকাঠিন্য সারায়। খাবারের আঁশ হজম হয় না। এভাবেই খাদ্যনালী অতিক্রম করতে থাকে। তাই পায়খানার পরিমাণ বাড়ে এবং পায়খানা নরম থাকে।
4. ডায়াবেটিসে উপকারী : ১০০ গ্রাম ছোলায় আছে: প্রায় ১৭ গ্রাম আমিষ বা প্রোটিন, ৬৪ গ্রাম শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট এবং ৫ গ্রাম ফ্যাট বা তেল। ছোলার শর্করা বা কার্বোহাইডেটের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। তাই ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ছোলার শর্করা ভাল। প্রতি ১০০ গ্রাম ছোলায় ক্যালসিয়াম আছে প্রায় ২০০ মিলিগ্রাম, লৌহ ১০ মিলিগ্রাম, ও ভিটামিন এ ১৯০ মাইক্রোগ্রাম। এছাড়াও রয়েছে ভিটামিন বি-১, বি-২, ফসফরাস ও ম্যাগনেসিয়াম। এর সবই শরীরের উপকারে আসে।
5. ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়: আমাদের শরীর এক চমৎকার সৃষ্টি। জীবাণুর সঙ্গে লড়াই করে তা ধ্বংস করতে পারে, মায়ের গর্ভে নতুন মনুষ্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরি করে, আশপাশের বিভিন্ন ক্ষতিকর বস্তু থেকে আমাদের সুরক্ষা দেয়, আরও কত কী। আর যখন আমরা ছোলা ও অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার নিয়মিত গ্রহণ করি তখন শরীরের এই সকল প্রক্রিয়া সহযোগিতা পায়। ছোলা পেটে গিয়ে তৈরি করে ‘বিউটারেট’ নামক ফ্যাটি অ্যাসিড। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই ‘ফ্যাটি অ্যাসিড’ মানুষের শরীরের রোগাক্রান্ত ও মৃতপ্রায় কোষ দমন করে যাতে সুস্থ কোষগুলো সুরক্ষিত থাকে। এভাবেই ‘কলোরেক্টাল ক্যান্সার’ দমন করে ছোলা। 6. হাড় শক্ত করে: ছোলায় থাকা ভোজ্য আঁশ, ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে এবং তা শক্তিশালী করে তোলে। বটিউলিজম’ এক ধরনের খাদ্যে বিষক্রিয়া, যার কারণ হলো ‘ব্যাক্টেরিয়াম ক্লস্ট্রিডিয়াম বটুলিনাম’ নামক ব্যাক্টেরিয়া। কৌটাজাত খাবার থেকে এই ব্যাক্টেরিয়ার আক্রমণের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা কম হলেও তা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কৌটাজাত খাবার সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে না পারলে এই ব্যাক্টেরিয়ার সৃষ্টি হয়। বিশেষত যেসব কৌটাজাত খাবারে লবণ ও চিনির মাত্রা কম থাকে এবং খাবারে যদি অক্সিজেন না পৌঁছায় তবে সেখানে এই ব্যাক্টেরিয়া জন্মানোর সম্ভাবনা থাকে বেশি। আর কৌটাজাত ছোলায় লবণ ও চিনি দুটোই কম থাকে। 7. রক্তের চর্বি কমায়: ছোলার ফ্যাটের বেশিরভাগই পলি আনস্যাচুয়েটেড। এই ফ্যাট শরীরের জন্য মোটেই ক্ষতিকর নয়, বরং রক্তের চর্বি কমাতে সাহায্য করে।
8. অস্থির ভাব দূর করে : ছোলায় শর্করার গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের পরিমাণ কম থাকায় শরীরে প্রবেশ করার পর অস্থির ভাব দূর হয়।
9. রোগ প্রতিরোধ করে : কাঁচা ছোলা ভিজিয়ে কাঁচা আদার সঙ্গে খেলে শরীরে আমিষ ও অ্যান্টিবায়োটিকের চাহিদা পূরণ হয়। আমিষ মানুষকে শক্তিশালী ও স্বাস্থ্যবান বানায় এবং অ্যান্টিবায়োটিক যে কোনো অসুখের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
10. জ্বালাপোড়া দূর করে : সালফার নামক খাদ্য উপাদান থাকে এই ছোলাতে। সালফার মাথা গরম হওয়া, হাত-পায়ের জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করে।
11. মেরুদণ্ডের ব্যথা দূর করে : এছাড়াও এতে ভিটামিন ‘বি’ও আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে। ভিটামিন ‘বি’ মেরুদণ্ডের ব্যথা, স্নায়ুর দুর্বলতা কমায়। ছোলা অত্যন্ত পুষ্টিকর। এটি আমিষের একটি উল্লেখযোগ্য উৎস। এতে আমিষ মাংস বা মাছের পরিমাণের প্রায় সমান। তাই খাদ্যতালিকায় ছোলা থাকলে মাছ মাংসের প্রয়োজন পরে না। ত্বকে আনে মসৃণতা। কাঁচা ছোলা ভীষণ উপকারী। তবে ছোলার ডালের তৈরি ভাজা-পোড়া খাবার যত কম খাওয়া যায় ততই ভালো। তাই হজমশক্তি বুঝে ছোলা হোক পরিবারের শক্তি।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: পুষ্টিকর খাবার বলেই যে ইচ্ছেমত খাওয়া যাবে তা কিন্তু নয়। মাত্র এক কাপ ছোলায় থাকে ১০ থেকে ১৫ গ্রাম প্রোটিন, ৯ থেকে ১২ গ্রাম ভোজ্য আঁশ, ৩৪ থেকে ৪৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেইট। ছোলাকে ‘গ্লুটেন ফ্রি’ বলাও সম্ভব নয়, বিশেষত কৌটাজাত হলে
0 Comments