গরুর মাংসের উপকারিতা/Health tips bangla

 গরুর মাংস খেলে কি হয়?


আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ?? প্রিয় পাঠকবৃন্দ!আশা করি আপনারা সকলেই ভাল আছেন। আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় হলো গরুর মাংসের উপকারিতা সম্পর্কে?

আপনি কি জানেন গরুর মাংস খেলে কি হয়?

যদি না জেনে থাকেন। তাহলে চলুন আজকে জেনে আসি গরুর মাংসের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।

প্রিয় পাঠকবৃন্দ!

গরুর মাংসের বেশ কিছু উপকারিতা এবং অপকারিতা রয়েছে। প্রথমে চলুন জেনে আসি গরুর মাংসের কিছু পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে।


পুষ্টি : গরুর মাংস প্রোটিনজাতীয় খাদ্যের অন্তর্ভুক্ত। প্রাণী থেকে সংগৃহীত হয় বলে এটি প্রাণিজ প্রোটিন। প্রোটিন ছাড়া আরো বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান গরুর মাংসে বিদ্যমান আছে।

প্রোটিন: গরুর মাংস থেকে উচ্চমাত্রায় প্রোটিন পাওয়া যায়। মাংস ছাড়াও হাড়, কলিজা, মগজ ইত্যাদি থেকেও প্রোটিন চলে আসে। গরুর মাংসের প্রোটিন থেকে যে অ্যামাইনো এসিড পাওয়া যায়, তা হাড় ও মাংসপেশির কাজে অনেক সাহায্য করে থাকে। ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে ২২.৬ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়।

ফ্যাট : গরুর মাংসে অনেক সম্পৃক্ত চর্বি থাকে। ফ্যাটের উপস্থিতির জন্য গরুর মাংস অনেক মজাদার হয়ে থাকে। কচি মাংসে এই ফ্যাটের পরিমাণ কম থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে ফ্যাট রয়েছে ২.৬ গ্রাম।

মিনারেলস : এক টুকরো গরুর মাংসে অনেক ধরনের মিনারেল পাওয়া যায়। বিশেষ করেঃ জিংক, আয়রন, সেলেনিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়াম ও কপার। এই মিনারেলগুলো শরীরের অনেক প্রয়োজনীয় কাজ করে থাকে। জিংক আমাদের শরীরের কোষ রক্ষণাবেক্ষণ এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে। বলা হয় তিন আউন্স পরিমাণ গরুর মাংস দৈনিক জিংকের ৩৯% চাহিদা পূরণ করে থাকে।

ভিটামিন : গরুর মাংসে অনেক রকম ভিটামিন থাকে, বিশেষ করে বি১২ বি৬ রিবোফ্ল্যাবিন ও বি১২-এর প্রয়োজনীয়তা অনেক, মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় এর প্রয়োজনীয়তা অনেক। হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথের মতে, দৈনিক ২.৪ মিলিগ্রাম বি১২ লাগে। তিন আউন্স গরুর মাংস বি১২-এর দৈনিক ৩৭% চাহিদা পূরণ করতে পারে। তিন আউন্স গরুর মাংস ফসফরাস, ভিটামিন বি১২, প্রোটিন, জিংক ও সেলেনিয়ামের খুবই ভালো উৎস। তিন আউন্স কচি গরুর মাংসে আয়রন, নায়াসিন, বি৬ ও রিবোফ্ল্যাভিন পাওয়া যায়।


এছাড়া আরও কিছু উপকারিতা রয়েছে।

গরুর মাংসের উপকারিতাঃ


১.শিশুর বৃদ্ধিতে সহায়কঃ

গরুর মাংস খেলে তা আমাদের বুদ্ধি-বৃত্তিক গঠন, শারীরিক বর্ধন ও রক্ত বর্ধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ৮৫ গ্রাম গরুর মাংসে ৯-১৩ বছর বয়সী শিশুর দৈনিক চাহিদার ১২৫ শতাংশ ভিটামিন বি১২, ৯০ শতাংশ প্রোটিন, ৩২ শতাংশ আয়রন, ২৯ শতাংশ নায়াসিন, ৭৪ শতাংশ জিঙ্ক, ৪২ শতাংশ সেলেনিয়াম, ৩২ শতাংশ ভিটামিন বি৬, ২৩ শতাংশ রিবোফ্লেভিন এবং ১৬ শতাংশ ফসফরাস থাকে।

২.খনিজের অভাব দূর করেঃ

শরীরে খনিজের অভাবে সৃষ্ট অসুখ-বিসুখ দূর করতে কাজ করে গরুর মাংস। কারণ এটি খনিজ লবণের দুর্দান্ত উৎস। গরুর মাংসে থাকে জিংক, ফসফরাস, সেলেনিয়াম এবং প্রচুর লৌহ। এই মাংস ভিটামিনের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। গরুর মাংস ভিটামিন বি-৩, বি-৬, বি-১২ ইত্যাদি ভিটামিনের জোগান দিয়ে থাকে।

৩.জিংকের ঘাটতি দূর করেঃ

আমাদের সুস্থতার জন্য জিংক একটি জরুরি উপাদান। এটি আমাদের শরীরের কোষ ভালো রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ৮৫ গ্রাম গরুর মাংস খেলে তা দৈনিক জিংকের ৩৯ শতাংশ ঘাটতি পূরণ করে।


এবারে চলুন জেনে আসি গরুর মাংসের অপকারিতা সম্পর্কে।

গরুর মাংসের অপকারিতাঃ

১.কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকি বৃদ্ধি করেঃ

অনেকে অতিরিক্ত গরুর মাংস খেয়ে ফেলেন। এতে বাড়ে কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকি। কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে পরবর্তীতে আরও বড় অসুখ দেখা দিতে পারে। তাই অতিরিক্ত গরুর মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। গরুর মাংসের সঙ্গে নানা ধরনের সবজি মিলিয়ে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া যায়।

২.কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়ঃ

অতিরিক্ত গরুর মাংস খাওয়া মোটেও উপকারী নয়। তাই খেতে যতই ভালো লাগুক, গরুর মাংস খেতে হবে পরিমান মত। চিকিৎসকদের মতে, সপ্তাহে পাঁচ বেলা গরু, খাসি অথবা ভেড়ার মাংস খেলে কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। সেইসঙ্গে প্রক্রিয়াজাত লাল মাংস খেলে তা মৃত্যু ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেয়।

৩.হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়ঃ

আপনি হয়তো জেনে থাকবেন, গরুর মাংস খেলে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। কারণ এতে থাকা অতিরিক্ত সোডিয়াম শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কারণ রক্তচাপ সৃষ্টিতে বা বাড়াতে কাজ করে এই সোডিয়াম। তাই গরুর মাংস খেলে হতে পারে উচ্চ রক্তচাপ। সেখান থেকে দেখা দেয় হৃদরোগ ও স্ট্রোকের মতো সমস্যা।


এবারে চলুন জেনে আসি গরুর মাংস খাওয়ার পরিমান সম্পর্কে।


গরুর মাংস কতটুকু খেতে পারবেন?

দৈনিক ৮৫ গ্রাম গরুর মাংস খেতে পারবেন । ৮৫ গ্রাম চর্বি ছাড়া গরুর মাংস খেলে তা আপনার দৈনিক ক্যালোরির চাহিদার ১০ শতাংশ পূরণ করবে। রান্না করা ৩ টুকরা মাংসে ৮৫ গ্রাম হয়, তাই চেষ্টা করুন দিনে ৩ টুকরার বেশি মাংস না খেতে। যদি একবারে আরও বেশি মাংস খেয়ে ফেলার ভয় থাকে তবে সপ্তাহে দুই দিনের বেশি গরুর মাংস না খাওয়াই ভালো।

এবারে চলুন জেনে আসি গরুর মাংসের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে।


গরুর মাংসের পুষ্টিগুণঃ

শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ৯টি পুষ্টি উপাদান আছে গরুর মাংসে। এগুলো হল প্রোটিন, জিঙ্ক, ভিটামিন বি ১২, সেলেনিয়াম, ফসফরাস, নায়াসিন, ভিটামিন বি৬, আয়রন এবং রিবোফ্লাভিন।

প্রোটিন শরীরের পেশি গঠনে ভূমিকা রাখে। জিঙ্ক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ফসফরাস দাঁত ও হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করে। আয়রন শরীরের পেশিতে অক্সিজেন প্রবাহে সহায়তা করে। ‘ভিটামিন বি১২’ খাদ্য থেকে শক্তি যোগান দেয়।

৩ আউন্স গরুর মাংস থেকে যে পরিমাণ জিংক আছে সেই পরিমাণ জিংক পেতে আপনাকে খেতে হবে ৩ আউন্স ওজনের ১১ টুকরা টুনা মাছ। এবং সেই পরিমাণ আয়রনের জন্য খেতে হবে ৩ আউন্স ওজনের ৭ টুকরা মুরগির বুকের মাংস। এবং সেই পরিমাণ আয়রনের জন্য খেতে হবে ৩ কাপ পালংশাক। এবং সেই পরিমাণ ‘রিবোফ্লাভিন’য়ের জন্য খেতে হবে ৩ আউন্স ওজনের আড়াই টুকরা মুরগির বুকের মাংস। এবং সেই পরিমাণ ‘থায়ামিন’ এর জন্য খেতে হবে ৩ আউন্স ওজনের ২ টুকরা মুরগির বুকের মাংস।

গরু-খাসির মাংসে রয়েছে উন্নত প্রথম শ্রেণির প্রোটিন যা মাংসপেশি গঠনে সহায়তা করে। শরীরের জন্য যে সব অত্যাবশকীয় এমাইনো এসিড প্রয়োজন সবগুলো এমাইনো এসিড পাওয়া যায় গরু-খাসির মাংস থেকে।

গরুর মাংসে রয়েছে পর্যাপ্ত আয়রন যা রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং সেই সঙ্গে আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে থাকে।

এছাড়া, দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। অতিরিক্ত আলসেমি-ক্লান্তি দূর করে কর্মোদ্যম রাখে। ডায়রিয়া প্রতিরোধে সাহায্য করে।


অতিরিক্ত চর্বিঃ

গরু কিংবা খাসি সব ধরনের মাংসেই কম বেশি চর্বি থাকে। প্রোটিনের উৎস হিসেবে মাংস অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, তাছাড়া চর্বিও প্রয়োজন । কিন্ত যখন আপনি অতিরিক্ত মাংস খাবেন তখন মাংসের সাথে আপনার শরীরে ঢুকছে প্রচুর পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট, অন্যদিকে আঁশ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পরিমাণে কম ঢুকছে , এটা পাওয়া যায় মূলত ফলমূল, শাকসবজি এবং ডাল জাতীয় খাবারের মধ্যে। ফলে আপনার শরীর হারিয়ে ফেলছে পুষ্টির ব্যালেন্স। প্রচুর পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট দেহে প্রবেশের কারণে কেবল যে মোটা হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায় তা নয়, বেড়ে যায় ডায়বেটিস এবং হৃদরোগের ঝুঁকিও।

এ ক্ষেত্রে যেটা করণীয়ঃ
 মাংস খাওয়া যেতে পারে চর্বি বাদ দিয়ে। তবে তা অবশ্যই অতিরিক্ত নয়। কেননা অতিরিক্ত কিছুই শরীরের জন্য ভাল নয়।


প্রিয় পাঠকবৃন্দ! আমাদের আজকের এই পোস্টটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে। তাহলে বেশি বেশি করে শেয়ার করবেন এবং অবশ্যই ফলোও বাটনটি ক্লিক করতে ভুলবেন না।


Post a Comment

0 Comments