আখরোটের উপকারিতা
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ? প্রিয় পাঠকবৃন্দ!আশা করি আপনারা সকলেই ভালো আছেন। আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় হলো আখরোটের উপকারিতা সম্পর্কে?
আপনি কি জানেন আখরোট খেলে কি হয়, বা এর উপকারিতা কি?
যদি না জেনে থাকেন।তাহলে চলুন আজকে জেনে আসি আখরোটের উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ সম্পর্কে?
প্রিয় পাঠকবৃন্দ!
আখরোট একপ্রকার বাদাম জাতীয় ফল । এটি ফাইবার , আন্টিঅক্সিডেন্ট ,ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ একটি পুষ্টিকর খাবার । স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত আখরোট খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কারণ আখরোট এর ভেতরে থাকা নানাবিধ পুষ্টিকর উপাদান মানুষের শরীরের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে বিশেষভাবে উপকারী।
আখরোটের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন। তাই এটা আমাদের শরীর গঠনে ভূমিকা রাখে। আমাদের মাঝে অনেকেই আছে যারা সব সময় আখরোট খেতে ভালোবাসে।
আখরোট ক্যান্সার, হৃদরোগ সারানোর পাশাপাশি মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ঠিক রাখতেও সাহায্য করে।কালো কিংবা বাদামি- দুই ধরনের আখরোটই স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী। জেনে নিন নিয়মিত আখরোট খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।
১.স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করেঃ
স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে আখরোট। এতে থাকা ওমেগা থ্রি অবসাদ কাটাতেও সাহায্য করে। মস্তিষ্কের কোষের সজীবতা বজায় রাখতে সহযোগী হয়।
২. ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করেঃ
আখরোটে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে, যা সুস্থ ত্বকের জন্য বিশেষ উপকারী। ত্বকের বলিরেখা কমাতে এবং বয়সের ছাপ দূর করতে প্রতিদিন খান আখরোট।
৩. ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করেঃ
চিকিৎসকরা বলেন যে, যে-কোনও ধরণের বাদামই ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে, বিশেষত যাঁরা নিয়মিত আখরোট খান তাঁদের টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় অনেকটাই কমে যায়।
৪. স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুলের জন্য সহায়কঃ
আখরোটে রয়েছে বায়োটিন ( ভিটামিন বি সেভেন ) যা চুলকে শক্তিশালী করে । এই ভিটামিন চুল পড়া কমিয়ে চুলের গোড়া মজবুত করে চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
৫. শরীরের পক্ষে খুব উপকারীঃ
শরীরের জন্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খুবই জরুরি। শরীরে ঘুরে বেড়ানো ফ্রি র্যাডিক্যালস হার্টের উপর চাপ ফেলে। আখরোটে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস থাকে। এটি শরীরের পক্ষে খুবই উপকারী।
৬.হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করেঃ
হার্ট সুস্থ রাখতে আখরোট বিশেষ ভূমিকা পালন করে । এতে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড যা শরীরে খারাপ কোলেস্টোরলের মাত্রা কমিয়ে ভালো কোলেস্টোরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে । ফলে হার্টের রোগের সম্ভাবনা কমে যায় আর হার্ট সুস্থ এবং ভালো থাকে।
৭.মানসিক অবসাদ দূর করেঃ
আখরোট মানসিক অবসাদ দূর করতে ভীষণ ভাবে সাহায্য করে । পুষ্টিবিদদের মতে , একমুঠো আখরোট কর্টিসল হরমোনের মাত্রা কমায় । এই হরমোন মানসিক চাপের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত । এছাড়া এতে থাকে ‘পলিঅ্যানস্যাচুরেটেড ফ্যাট ‘ যা দুশ্চিন্তাগ্রস্থ অবস্থায় রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে । তাই মনে অবসাদ এলে আখরোট অবশ্যই খেতে ভুলবে না।
৮.মস্তিস্ক ভালো রাখতে সাহায্য করেঃ
আখরোটে বেশ কয়েকটি নিউরোপ্রোটেক্টিভ যৌগ আছে। যেমন – ভিটামিন ই ,ফোলেট , মেলাটোনিন ,ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে আখরোট খাওয়া মস্তিস্ক ও স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ উপকারী। আখরোট এ থাকা উপাদান পারকিনসন্স রোগ এবং আলজাইমার’স হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে দেয় । স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে মস্তিষ্কের ফাংশন ভাল রাখে ।
৯.ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ
আখরোট খেলে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়, বিশেষত অগ্ন্যাশয় , প্রস্টেট ও মলদ্বারের। আখরোটে থাকা গামা ,টোকোফেরল ,ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড ও ইলেজিক গ্যালিক অ্যাসিড শরীরে ক্যান্সার প্রতিরোধের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ।
১০.অনিদ্রা দূর করেঃ
আখরোটে মেলাটোনিন নামক এক প্রকার যৌগ থাকে এই মেলাটোনিন ঘুমের পক্ষে বিশেষ সহায়ক । কারণ শরীরে মেলাটোনিন এর মাত্রা বৃদ্ধি পেলে ঘুম ভালো হয়। যারা অনিদ্রা রোগে ভুগছেন তারা নিয়মিত আখরোট খেলে এর হাত থেকে রক্ষা পেতে পারেন।
১১.পেট পরিষ্কারে সাহায্য করেঃ
পেট পরিষ্কার রাখতে শরীরে ফাইবার থাকা অত্যন্ত জরুরি। সাধারণত যে খাবারগুলি থেকে শরীরে প্রোটিন আসে, সেগুলিতে ফাইবারের পরিমাণ অত্যন্ত কম। আখরোটে থাকা ফাইবার হজমক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
১২.স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করেঃ
আখরোটে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি থাকে, যা চামড়াকে বুড়িয়ে যেতে বাধা দেয়। বলা হয় ভিটামিন বি হল স্ট্রেস রিলিভার ও মুড ম্যানেজার। স্ট্রেস কম থাকলে আপনার চামড়া উজ্জ্বল হবে। ভিটামিন বি-এর সঙ্গে ভিটামিন ই মিশে তা শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কাজ করে।
১৩.শিশুর মস্তিস্কের বিকাশ ঘটায়ঃ
শিশুর মস্তিস্কের বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে,একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, আখরোটে থাকা ভিটামিন ই, মোলাটোন, ওমেগা ৩, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে বিশেষভাবে সাহায্য করে। তাই ছোটবেলা থেকেই আপনার শিশুকে আখরোট খাওয়ানো অভ্যাস করুন।
১৪. ওজন নিয়ন্ত্রণ করেঃ
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, নিয়মিত আখরোট খেলে ওজন কিন্তু নিয়ন্ত্রণে থাকে। কারণ এতে রয়েছে ওমেগা ৩, প্রোটিন এবং ফাইবার, যা দেহের ওজনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তাই যদি আপনি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান তাহলে অবশ্যই আখরোট খান।
১৫.হজম ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করেঃ
পেট পরিষ্কার রাখতে শরীরে ফাইবার থাকা অত্যন্ত জরুরি। সাধারণত যে খাবারগুলি থেকে শরীরে প্রোটিন আসে ,সেগুলিতে ফাইবারের পরিমান অত্যন্ত কম । আখরোটে থাকা ফাইবার হজম ক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
১৬.গর্ভবতী মহিলাদের জন্য উপকারীঃ
প্রতিদিন আখরোট খাওয়া গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুবই উপকারী। আখরোটে স্বাস্থ্যকর ভিটামিন বি কমপ্লেক্স রয়েছে যেমনঃ ফোলেট, রাইবোফ্লাভিন এবং থিয়ামিন। আখরোটের ফলিক অ্যাসিড গর্ভবতী মহিলা এবং ভ্রূণের পক্ষে প্রয়োজনীয়। ফলিক অ্যাসিডে অনেক উপকারী জৈবিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা গর্ভাবস্থায় সহায়ক হতে পারে। এতে উচ্চমাত্রায় ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা মা ও শিশুর জন্য উপকারী। এটি গর্ভের শিশুর এলাৰ্জি প্রতিরোধেও সাহায্য করে।
১৭. হাড় এবং দাঁত শক্তিশালী করতে সহায়ক হয়ঃ
হাড় এবং দাঁত শক্তিশালী হয়। ভেজানো আখরোটে এমন অনেক উপাদান পাওয়া যায়। যা আপনার হাড় এবং দাঁতকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করতে পারে। আসলে, আখরোটে আলফা-লিনোলেনিক অ্যাসিড থাকে যা হাড়কে শক্তিশালী করতে সহায়তা করতে পারে।
১৮. দীর্ঘায়ু লাভ হয়ঃ
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে , প্রতি সপ্তাহে তিন দিন আখরোট খেলে দীর্ঘ এবং সুস্থ জীবন উপভোগ করতে পারবেন ।
১৯.ভালো ঘুমের জন্য সহায়কঃ
অনিদ্রার সমস্যা থাকলে আখরোট রাখুন খাবারের তালিকায়। এতে থাকা মেলাটোনিন ভালো ঘুমের জন্য সহায়ক। আখরোটে উপস্থিত ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড রক্তচাপকে কম রাখে এবং স্ট্রেস উপশম করে।
এবারে চলুন জেনে আসি আখরোটের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে?
আখরোটের পুষ্টিগুণঃ
আখরোটে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি। এতে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কম থাকার কারণে সহজেই এটি হালকা খাবার বা জল খাবার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। কম পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট ও অধিক পরিমাণে ফাইবার যুক্ত থাকার কারণে এটি একটি বিশেষ উপকারী খাবার।
একটি আখরোটে ৬৫ শতাংশ ফ্যাট এবং ১৫ শতাংশ প্রোটিন থাকে। এছাড়াও থাকে ফাইবার, পটাশিয়াম এবং অল্প পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট। আখরোটে ফ্যাটের পরিমাণ বেশি থাকলেও এই ফ্যাট ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
সাগরের মাছের বিকল্প হিসেবে এই ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড খুবই কার্যকর। তাই যারা মাছ খেতে পারে না বা খায় না তারা চাইলে আখরোট দিয়ে মাছের পুষ্টি পূরণ করতে পারেন। এছাড়াও আখরোটে রয়েছে ১৮৫ মিলিগ্রাম ক্যালোরি ও ১ মিলিগ্রাম সোডিয়াম।
আখরোট খাওয়ার নিয়মঃ
আখরোট খাওয়ার কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। যেকোনো সময়, যেকোনো ভাবে খাওয়া যেতে পারে।
বিভিন্ন পুষ্টিবিদদের মতে, রাতে পানির মধ্যে ভিজিয়ে রেখে তারপর খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়৷ তাই সারা রাত ৪-৫ টি আখরোট পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খেতে পারেন।
এছাড়াও দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে এর পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি পায়। মধুর সাথে মিশিয়েও খাওয়া যায়।
তাছাড়াও ঠান্ডার মধ্যে খেলে এর থেকে দ্বিগুণ উপকারিতা পাওয়া যায়। তাই শীতের দিনে আখরোট খাওয়া অনেক বেশি উপকারী।
আখরোটের অপকারিতাঃ
যেকোনো খাবারই প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক নয়। কারণ তাতে শরীরে পুষ্টি উপাদানগুলোর সামঞ্জস্য বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই অন্যান্য খাবারের মতোই আখরোটও প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না। আপনি যদি আখরোট বেশি খেয়ে ফেলেন তবে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমনঃ অ্যালার্জি হতে পারে,লিভারের সমস্যা দেখা দিতে পারে,কালো আখরোটে থাকা ফাইটেটস শরীরের আয়রন শুষে নিতে পারে। ফলে শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! আমাদের আজকের এই পোস্টটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে বেশি বেশি করে শেয়ার করবেন এবং অবশ্যই ফলোও বাটনটি ক্লিক করতে ভুলবেন না।
0 Comments