জলপাইয়ের উপকারিতা /Health tips bangla

 জলপাইয়ের উপকারিতা কি?



আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ? প্রিয় পাঠকবৃন্দ! আশা করি আপনারা সকলেই ভালো আছেন। আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় হলো জলপাইয়ের উপকারিতা সম্পর্কে।

আপনি কি জানেন! জলপাই খেলে কি হয়, বা এর উপকারিতা কি?

যদি না জেনে থাকেন। তাহলে চলুন আজকে জেনে আসি জলপাইয়ের উপকারিতা সম্পর্কে।

প্রিয় পাঠকবৃন্দ!
জলপাই আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে,জলপাইতে রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট । এবং রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি । জলপাই সর্দি, জ্বর এবং নানান রোগ থেকে আমাদেরকে রক্ষা করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এছাড়াও রয়েছে, আরো নানান উপকারিতা।

১.হাড়ের ক্ষয় রোধ করেঃ
 জলপাইয়ের মনো স্যাচুরেটেড চর্বিতে থাকে প্রদাহবিরোধী উপাদান। বয়সের কারণে অনেকেরই হাড়ের ক্ষয় হয়। হাড়ের ক্ষয়রোধ করে জলপাই তেল।

২.হৃদ্যন্ত্রের জন্য উপকারীঃ
যখন কোনো মানুষের রক্তে ক্ষতিকর মুক্ত কণিকা (ফ্রি র্যা ডিকেল) ও কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায় তখন হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেশি থাকে। জলপাইয়ের তেল হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়। জলপাইয়ের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। ফলে কমে যায় হৃদ্রোগের ঝুঁকি।

৩.ক্যানসার প্রতিরোধ করেঃ
কালো জলপাই ভিটামিন-ই–এর বড় উৎস। যা ফ্রি র্যা ডিকেল ধ্বংস করে। ফলে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। জলপাইয়ের ভিটামিন-ই কোষের অস্বাভাবিক গঠনে বাধা দেয়। ফলে ক্যানসারের ঝুঁকি কমে।

৪.পরিপাকক্রিয়ায় সাহায্য করেঃ
 নিয়মিত জলপাই খেলে গ্যাস্ট্রিক ও আলসার কম হয়। বিপাকক্রিয়া ঠিকভাবে হয়।

৫.ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করেঃ
 জলপাই রক্তের চিনি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ফলে ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
চোখের যত্নে: জলপাইয়ে ভিটামিন-এ পাওয়া যায়। ভিটামিন-এ চোখের জন্য ভালো। যাদের চোখ আলো ও অন্ধকারে সংবেদনশীল তাদের জন্য ওষুধের কাজ করে জলপাই। এ ছাড়া জীবাণুর আক্রমণ, চোখ ওঠা, চোখের পাতায় ইনফেকশনজনিত সমস্যা দূর করে এটি।

৬.রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ
 জলপাই প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে। সর্দি, জ্বর ইত্যাদি দূরে থাকে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

৭.কানের ব্যথা কমাতে সাহায্য করেঃ 
কানের ব্যথা শিশুদের একটি সাধারণ রোগ। ৫ মিলি জলপাই পাতার রস গরম করে তাতে মধু মিশিয়ে নিন। কানে ১-২ ফোঁটা দিলে কানের ব্যথা ভালো হয়।

৮.মুখের আলসার নিরাময় করেঃ
জলপাইয়ের কাঁচা ফল পানিতে সিদ্ধ করে এর ক্বাথ তৈরি করুন। এই ক্বাথ দিয়ে গার্গল করলে দাঁত ও মাড়ির রোগ নিরাময় হয়। এটি মুখের ঘাও নিরাময় করে।

৯.আমাশা নিরাময় করেঃ 
জলপাই পাতা পিষে বার্লি ময়দা দিয়ে মেশান। এতে কিছু পানি রেখে নাভিতে লাগালে ঘন ঘন ডায়রিয়া বন্ধ হয়।

১০.মূত্রনালীর রোগ প্রতিরোধ করেঃ 
প্রস্রাব যদি অবাধে না আসে বা প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া বা ব্যথা হয়, তাহলে জলপাই পাতার ক্বাথ খুব উপকারী। ৫-১০ মিলি ক্বাথ পান করলে প্রস্রাবের সব ধরনের অসুবিধায় উপকার পাওয়া যায়।

১১.জয়েন্টের ব্যথা কমাতে সাহায্য করেঃ 
অলিভ অয়েল ভাটা জনিত রোগে খুবই কার্যকরী। ভাটা রোগগুলি সাধারণত জয়েন্টের ব্যথার সাথে যুক্ত। জলপাইয়ের মূল পিষে অস্থিসন্ধিতে লাগালে বাত রোগে উপকার পাওয়া যায়। অলিভ সিড অয়েল লাগালে বাত ও জয়েন্টের ব্যথা সেরে যায়।

১২.ক্ষত নিরাময় করেঃ
ক্ষতস্থানে জলপাই খুবই কার্যকরী। ক্ষতস্থানে অলিভ সিড অয়েল লাগালে দ্রুত সেরে যায়। জলপাইয়ের কাঁচা ফল পিষে ঘা বা পুরাতন ক্ষতের উপর লাগালে ক্ষত সেরে যায়।


১৩.চুল পড়ার সমস্যা দূর করেঃ
 জলপাই তালে টাকা ফ্যাটি এচিড ও আন্টি অক্সডিএন্ট চুলের যত্ন করে , জলপাইয়ের তাল চুলের গড়ে থাকে মুজবুত করতে সাহায্য করে ।

১৪.ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ
কালো জলপাই এ থাকে ভিটামিনে ই এটি আন্টি ফ্রি রেডিক্যাল ধ্বংস করে আর ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে,
ভিটামিন ই কোষের অস্বভাবিক ঘটনা বাধা দেয় ।

১৫.পিত্তথলির সমস্যা দূর করেঃ
 নিয়িমিত জলপাই খেলে পিত্তথলির সমস্যা দূর হয় ।এবং পিত্ত থলিতে পাথর হবে সম্বাভনা কমে ।

১৬.সর্দি ,কাশি এর সমস্যা সমাধান করেঃ
জলপাই হলে প্রাকৃতিক আন্টি অক্সডিএন্ট যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় । এবং সর্দি কাশির সমস্যা দূর করে ।

১৭.ঘামের গন্ধ দূর করেঃ 
বন্য জলপাই পাতা শুকিয়ে পিষে নিন। এই পাউডার শরীরে ঘষলে ঘাম কম হয় এবং ঘামের ফলে সৃষ্ট দুর্গন্ধ দূর হয়।

১৮.কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা সমাধান করেঃ 
একটি গবেষণা অনুযায়ী, জলপাই পাতার নির্যাসে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা দূর করার ক্ষমতা দেখা গেছে।

১৯.ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করেঃ
একটি গবেষণা অনুসারে, জলপাইয়ে অ্যান্টিডায়াবেটিক বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায় যা শরীরে ইনসুলিনের পরিমাণ ঠিক রাখতে সাহায্য করে। এটি ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলি কমাতে বা প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।

২০.উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ
একটি গবেষণা অনুযায়ী, জলপাই পাতা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

২১.কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ
একটি গবেষণায় এটি নিশ্চিত করা হয়েছে যে জলপাই পাতার নির্যাস শুধুমাত্র রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে নয়, কোলেস্টেরলও নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

২২.মজবুত হাড়ের জন্য সহায়কঃ 
একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, জলপাইয়ে সঠিক পরিমাণে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় বলে এটি হাড়ের জন্য খুবই উপকারী।

২৩.চর্মরোগে কার্যকরীঃ
চর্মরোগ ও মুখের দাগ দূর করতে জলপাই অত্যন্ত কার্যকরী।জলপাইয়ের কাঁচা ফল পিষে লাগালে গুটিবসন্ত ও অন্যান্য ফোড়া নিরাময় হয়।জলপাই পাতা পিষে একটি পেস্ট তৈরি করুন, এটি আমবাত, চুলকানি এবং দাদ উপশম করে।আগুনে শরীরের কোনো অংশ পুড়ে গেলে কাঁচা জলপাইয়ের ফল পিষে লাগালে ফোসকা পড়ে না।দাদের উপর জলপাই গাছের আঠা লাগালে দাদ নিরাময় হয়।

২৪.আয়রনের খুব ভালো উৎসঃ 
জলপাই বিশেষ করে কালো জলপাই আয়রনের উৎস, আয়রন আমাদের দেহে রক্ত চলাচল করাতে সহায়তা করে, আর প্রাকৃতিক আয়রনের উৎসের জন্য জলপাই-ই সেরা।

২৫.অ্যালার্জি প্রতিরোধ করেঃ 
গবেষণায় দেখা গেছে, জলপাই অ্যালার্জি প্রতিরোধে সহায়তা করে। জলপাইয়ে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যা ত্বকের ইনফেকশন ও অন্যান্য ক্ষত সারাতে কার্যকরী ভুমিকা রাখে।

২৬.চোখের জন্য উপকারীঃ 
জলপাইয়ে ভিটামিন-এ পাওয়া যায়। ভিটামিন-এ চোখের জন্য ভালো। যাদের চোখ আলো ও অন্ধকারে সংবেদনশীল তাদের জন্য ওষুধের কাজ করে জলপাই। এ ছাড়া জীবাণুর আক্রমণ, চোখ ওঠা, চোখের পাতায় ইনফেকশনজনিত সমস্যা দূর করে এটি।

এবারে চলুন জেনে আসি জলপাইয়ের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে।

জলপাইয়ের পুষ্টিগুণঃ
 
জলপাইয়ের তেল যে কোনো বয়সের মানুষের জন্য অনেক উপকারী। জলপাই ও এর তেলে নেই কোনো চর্বি বা কোলেস্টেরল। তাই রক্তে চর্বি বা লিপিড জমে যাওয়ারও কোনো ভয় নেই। অন্যদিকে রক্তের চর্বি বা ফ্যাটের পরিমাণও কমায় এই জলপাই।
অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এজেন্ট জলপাইতে রয়েছে উচ্চহারে। এই উপাদানের জন্য দেহের রোগ-জীবাণুগুলো মারা যায় এবং অতিবেগুনি রশ্মি থেকেও ত্বক রক্ষা পায়।
জলপাইয়ের খোসায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ বা ডায়াটারি ফাইবার, যা পাকস্থলীর বিভিন্ন অংশ যেমন ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদান্ত্র, কোলনের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে এবং এই আঁশ খাবার সঠিকভাবে হজমে সহায়তা করে।
দেহের রক্ত চলাচল ঠিক রাখতে অবদান রাখে। ফলে দেহের জন্য ক্ষতিকর লাইপোপ্রোটিনের পরিমাণ কমে যায়। হৃৎপিন্ড কাজ করে সঠিকভাবে।
এতে আছে উচ্চমাত্রার ভিটামিন ‘সি’ ও ‘এ’। এই ভিটামিন দুটি চোখের বিভিন্ন রোগকে দূরে রাখতে সহায়তা করে। ত্বক, চুল, দাঁত, হাড়কে রাখে মজবুত।
নিয়মিত জলপাই খেলে গলব্লাডার বা পিত্তথলিতে পাথর, বাতের ব্যথা কিংবা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের পরিমাণ কমে যায়।
জলপাইয়ে প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্টও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে, যা দেহের ক্যানসারের জীবাণুকে ধ্বংস করে এবং রোগ প্রতিরোধ শক্তিকে বাড়ায় দ্বিগুণ পরিমাণে।
রাতকানা, চোখওঠা, চোখের পাতায় ইনফেকশন জনিত সমস্যাগুলো দূর করে এই জলপাই।

প্রতি ১০০ গ্রাম জলপাইতে রয়েছেঃ খাদ্যশক্তি, ৭০ কিলোক্যালরি, ৯.৭ শর্করা, ক্যালসিয়াম ৫৯ মিলিগ্রাম ,ভিটামিন-সি ১৩ মিলিগ্রাম ।

এবারে চলুন জেনে আসি জলপাইয়ের অপকারিতা সম্পর্কে।

জলপাই খাওয়ার অপকারিতাঃ
 
অপকারিতা বলতে তেমন কিছু নেই। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, যারা ওজন বৃদ্ধি করতে চায় তাদের ক্ষেত্রে জলপাইয়ের অপকারিতার দিক বলা যায়। যারা ওজন বাড়াতে চায় তাদের ক্ষেত্রে জলপাই বেশি না খাওয়াই ভালো। অতিরিক্ত জলপাই খেলে শরীরের ওজন কমে যাবে।
তাই যারা ওজন কমাতে চায় না তাদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত জল পাই না খাওয়াই ভালো। এছাড়াও অনেকেই আচার খেতে পছন্দ করে তবে অতিরিক্ত আচার খাওয়া ভালো নয়। এর সাথে খালি পেটে খাওয়া মোটেও ঠিক নয়, তাই এসব বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত।


এবারে চলুন জেনে আসি জলপাই খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।

জলপাই খাওয়ার নিয়মঃ
 
জলপাই শীতকালীন একটি ফল, এই ফলটির স্বাদ টক, তবে এর অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। এই ফলটি কাঁচা অবস্থায় খাওয়া যায় এবং পেকে গেলেও খাওয়া যায়। এর পাশাপাশি ভর্তা করে, আচার বানিয়ে এবং রান্না করেও খাওয়া যায়।
তবে জলপাইয়ের আচার খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই সকালের নাস্তা খেয়ে নিতে হবে। তা না হলে কিছু সমস্যা হতে পারে। এই ফলটির প্রচুর উপকারিতা রয়েছে, তাই শরীর স্বাস্থ্য রক্ষার ক্ষেত্রে জলপাইয়ের আচার খাওয়া বা জলপাই রান্না করে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো। এছাড়াও জলপাই ঔষধি হিসেবেও কাজ করে।


প্রিয় পাঠকবৃন্দ! আমাদের আজকের এই পোস্টটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে। তাহলে বেশি বেশি করে শেয়ার করবেন এবং অবশ্যই ফলোও বাটনটি ক্লিক করতে ভুলবেন না।
 







Post a Comment

0 Comments