মধুর উপকারিতা ও অপকারিতা
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ?প্রিয় পাঠকবৃন্দ! আশা করি আপনারা সকলেই ভালো আছেন। আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় হল মধুর উপকারিতা ও উপকারিতা সম্পর্কে?
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! মধুতে রয়েছে ২৫ থেকে ৩৭ শতাংশ গ্লুকোজ, ৩৪ থেকে ৪৩ শতাংশ ফ্রুক্টোজ, ০.৫ থেকে ৩.০ শতাংশ সুক্রোজ, ৫ থেকে ১২ শতাংশ মন্টোজ,২২ শতাংশ অ্যামাইনো অ্যাসিড,২৮ শতাংশ খনিজ লবণ, ১১ শতাংশ এনকাইম, ১০০ গ্রাম মধুতে থাকে ২৮৮ ক্যালরি, ভিটামিন বি১,ভিটামিন বি২,ভিটামিন বি৩,ভিটামিন বি৫,ভিটামিন বি৬,আয়োডিন, জিংক, কপার, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান,অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান এবং এতে চর্বি ও প্রোটিন নেই। মধুতে আরো বিশেষ কিছু উপকারিতা রয়েছে।
যেমনঃ
১.রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ
মধু শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। শরীরের ভেতরে ও বাইরে কোনো রকম ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, যে কোনো রকম সংক্রমণ থেকে দেহকে রক্ষা করে।
২.ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ
নিয়মিত মধু খেলে পাকস্থলীতে বাড়তি গ্লুকোজ তৈরি হয়। এই গ্লুকোজ মস্তিষ্কের সুগার লেভেল বাড়িয়ে দেয়। তার ফলে মেদ কমানোর হরমোন নিঃসরণের জন্য বেশি মাত্রায় চাপ সৃষ্টি করে। ফলে মেদ কমে যায়।
৩. অনিদ্রা দূর করেঃ
অনিদ্রার জন্য খুব ভালো ওষুধ হল মধু। রাতে নিয়ম করে মধু খেলে অনিদ্রা দূর হয় এবং খুব ভালো ঘুম হয়।
৪. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ
মধুতে রয়েছে ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স। এই ভিটামিন বি কমপ্লেক্স কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
৫. ডায়রিয়া প্রতিরোধ করেঃ
মধু ডায়রিয়া প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তাই যাঁদের আমাশা, ডায়রিয়া বা পেট খারাপের মতো সমস্যা আছে তাঁরা নিয়মিত মধু সেবন করতে পারেন।
৬.হজমের সমস্যা দূর করেঃ
মধুর মধ্যে থাকা উপাদানগুলি হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে খাবার খাওয়ার পর বদ হজম, গলা বুক জ্বালা ইত্যাদি সমস্যা দূর হয়।
৭.পাকস্থলী সুস্থ রাখেঃ
মধু খেলে পাকস্থলীর কাজ জোরালো হয়। কারণ এটি হজমে সাহায্য করে। এর ব্যবহার হাইড্রোক্রলিক অ্যসিড ক্ষয় হওয়া কমিয়ে দেয়। তার ফলে পাকস্থলীর কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।
৮.অরুচি ভাব দূর করেঃ
অনেকেই বেশি খাবার খেতে পারেন না। একটু খেয়েই হাঁপিয়ে ওঠেন। বা খাওয়ার ইচ্ছাটাই থাকে না। অরুচিতে ভোগেন। সে ক্ষেত্রে মধু খেলে খাবারে অরুচি কমে। খাবারের চাহিদা বৃদ্ধি পায়।
৯.বমিভাব দূর করেঃ
অনেকেই আছেন খাবার দেখলেই বা সামান্য খেলেই বমি বমি ভাব আসে। সেই সমস্যার সমাধানে মধু খেতে পারেন।মধু বমিভাব কমাতে সাহায্য করে।
১০. স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করেঃ
মধু যে শুধু আপনার স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে , তা নয়। ঘুমানোর আগে এক চামচ মধু খেলে তা মস্তিষ্কের কাজ সঠিক ভাবে চালাতে সাহায্য করে। তার ফলে মস্তিষ্কের কার্য ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তথা মস্তিষ্কের শক্তি বৃদ্ধি পায়।
১১. রক্ত ও রক্তনালী পরিষ্কার করেঃ
মধু নিয়মিত খেলে রক্তনালীর বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়। অর্থাৎ রক্তনালী পরিষ্কার থাকে। সেখানে দূষিত কোনো পদার্থ যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তা জমতে পারে না। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।
১২.রক্ত উৎপাদন বৃদ্ধি করেঃ
রক্ত উৎপাদনকারী উপকরণ হল আয়রন। আর এই আয়রন প্রচুর পরিমাণে রয়েছে মধুতে। ফলে শরীরে লোহিত রক্ত কণিকা, শ্বেত রক্ত কণিকা-সহ রক্তের ইত্যাদি উপাদানগুলি গড়ে তুলতে সাহায্য করে মধু।
১৩.কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ
মধু রক্তের খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ ১০% পর্যন্ত কমিয়ে দেয়। রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমার অর্থ হল হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা অনেকটাই কমে যাওয়া।
১৪.শরীরের ব্যথা কমাতে সাহায্য করেঃ
আজকাল বেশির ভাগ মানুষেরই শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা হয়ে থাকে। ছোটো বড়ো সকলেরই গাঁটে বা জয়েন্টে ব্যথায় কষ্ট পাওয়ার একটি সমস্যা তো লেগেই থাকে। এই সমস্যার কারণ হল শরীরের অবাঞ্ছিত রস। এই রসের কারণে বাতের ব্যথা তৈরি হয়। সেই খারাপ রস কমাতে মধু বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
১৫.পেশিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করেঃ
পেশিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে মধু। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি। এই প্রাকৃতিক চিনি শরীরে শক্তি যোগায়। পেশিকে অনেক বেশি কর্মশীল, সবল রাখতে সাহায্য করে।
১৬.শরীরের দুর্বলতা দূর করেঃ
অনেকেই সারাক্ষণ ঝিমুনি বা দুর্বল অনুভব করেন। এই ঝিমুনি, ঘুম ঘুম বা দুর্বল ভাব কাটানোর জন্য ও সারাক্ষণ তরতাজা থাকতে নিয়মিত মধু খাওয়া খুব ভালো।
১৭.যৌন দুর্বলতার সমস্যা দূর করেঃ
অনেক পুরুষের একটা সমস্যা থাকে, তা হল যৌন দুর্বলতার সমস্যা। এই সমস্যা নানান রকমের হয়। এই সমস্যার একটিও যদি কোনো পুরুষের থাকে তবে তিনি নিয়মিত মধু খাওয়া শুরু করতে পারেন। তাতে এই সমস্যা থেকে রেহাই মিলবে।
১৮.হাঁপানি রোগ কমাতে সাহায্য করেঃ
মধুর নানান গুনাগুনের মধ্যে একটি গুণ হল এটি হাঁপানি রোগ কমাতে সাহায্য করে। তাই এই রোগ থাকলে তা কমাতে হলে খাওয়া যেতে পারে মধু।
১৯.তাপ উৎপাদনে সহায়তা করেঃ
শীতের ঠান্ডায় এটি শরীরকে গরম রাখে। এক অথবা দুই চা–চামচ মধু এক কাপ পানির সঙ্গে খেলে শরীর ঝরঝরে ও তাজা থাকে।
২০.পানিশূন্যতা দূর করেঃ
ডায়রিয়া হলে এক লিটার পানিতে ৫০ মিলিলিটার মধু মিশিয়ে খেলে দেহে পানিশূন্যতা রোধ করা যায়।
২১.দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করেঃ
চোখের জন্য ভালো। গাজরের রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে দৃষ্টিশক্তি বাড়ে।
২২.তারুণ্য বজায় রাখতে সাহায্য করেঃ
তারুণ্য বজায় রাখতে মধুর ভূমিকা অপরিহার্য। এতে রয়েছে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, যা ত্বকের রং ও ত্বক সুন্দর করে। ত্বকের ভাঁজ পড়া ও বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে। শরীরের সামগ্রিক শক্তি ও তারুণ্য বৃদ্ধি করে।
২৩.হাড় ও দাঁতের গঠন মজবুত করেঃ
মধুর মধ্যে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ক্যালসিয়াম। এই ক্যালসিয়াম দাঁত, হাড়, চুলের গোড়া শক্ত রাখে, নখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে, ভেঙে যাওয়া রোধ করে।
২৪.দাঁতের জন্য উপকারীঃ
মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য রক্ষায় মধু ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ এটি দাঁতের জন্য খুবই ভালো। দাঁতের ক্ষয়রোধ করতে পারে মধু। অনেক সময়ই দাঁতে স্টোন হয় অর্থাৎ যাকে দাঁতে পাথর জমা বলে, সেই দাঁতে পাথর জমাট বাঁধা রোধ করে মধু। তা ছাড়াও দাঁত পড়ে যাওয়া আটকাতে বা তা বিলম্বিত করতে সাহায্য করে মধু। সঙ্গে দাঁতের মাড়ির স্বাস্থ্য রক্ষা করে।
২৫.মুখের ঘা নিরাময় করেঃ
অনেক সময়ই ভিটামিনের অভাবে মুখের ভেতরে ঘা হয়। অথবা দাঁতের মাড়িতে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। সে ক্ষেত্রে মধু জলে কুলি করলে উপকার পাওয়া যায়।
২৬. দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে সাহায্য করেঃ
চোখের জন্য খুবই ভালো মধু। দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এই মধু।
২৭.সর্দি কাশি কমাতে সাহায্য করেঃ
শিশুদের সর্দি কাশি ঠাণ্ডা লাগা কমাতে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে নিয়মিত মধু দেওয়া উচিত।
২৮.গলার স্বর যন্ত্রের জন্য খুব ভালোঃ
গলার স্বর যন্ত্রে বা স্বরনালীতে সংক্রমণ হলেও সেই ক্ষত দূর করতে নিয়মিত মধু সেবন করা যেতে পারে। মধু ক্ষত নিরাময় করে এবং সংক্রমণ দূর করে।
২৯. তাপমাত্রা বৃদ্ধি করেঃ
অনেক সময়ে শরীরের তাপমাত্রা কমে যায়। কাঁপুনি দেয়। ইত্যাদি সমস্যায় অথবা শীতকালেও শরীরের আভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা ধরে রাখতে সাহায্য করে মধু।
৩০. আদ্রতা বজায় রাখেঃ
অনেক সময় নানান কারণে শরীর জলশূন্য হয়ে পড়ে। শরীরে জলের অভাব বোধ হয়। তার থেকে দেখা দেয় অন্যান্য অনেক সমস্যা। এই জলশূন্যতা বা আর্দ্রতার অভাব দূর করতে মধু খুবই সাহায্য করে। কারণ এতে রয়েছে জলীয় উপাদানও।
এবারে চলুন জেনে আসি মধু খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে?
মধু খাওয়ার নিয়ম সমূহঃ
মধু খাওয়ার বিশেষ তেমন কোন নিয়ম নেই । তবে অবশ্যই নিয়মিত মধু পান করা সর্বোত্তম৷ এতে শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম অনেক শক্তিশালী হয় । পাশাপাশি যে উপকারিতাগুলি পাবেন সেগুলিও দৃশ্যমান হবে।
যেমনঃ
প্রতিদিন সকালে ১-২ চা চামচ মধু সরাসরি খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করতে পারেন । এটি শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী ।
মধু শরীরের ওজন কমাতে কাজে লাগে। রোজ সকালে কুসুম গরম পানির সাথে ১ – ২ চা চামচ মধুর সঙ্গে হালকা লেবুর রস মিশিয়ে খালি পেটে পান করবেন এতে আপনার শরীরের মেদ কমবে ।
কাঁচা ছোলার ভিজিয়ে রেখে এর সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে শারীরিক দুর্বলতা দ্রুত দূর করে।
চায়ের সঙ্গে চিনি এর পরিবর্তে মধু পান করতে পারেন ৷ চিনিকে বলা হয়ে থাকে ‘হোয়াইট পয়জন’। এটি মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর ৷
দুধের সঙ্গে মধু মিশিয়ে পান করতে পারেন ৷ এটি খুবই উত্তম একটি পানীয় ৷ তবে অবশ্যই দুধ গরম থাকা অবস্থায় এতে মধু মিশাবেন না । তাপমাত্রা স্বাভাবিক হলে তখন মধু মিশিয়ে খাবেন ৷
যারা কোষ্ঠকাঠিন্যতায় ভুগছেন তারা ১ মগ পানিতে ২ চা চামচ ইসুফগুলের ভুসি এবং ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে খালি পেতে কয়েকদিন পান করলে ভাল সুফল পাবেন।
সর্দি-জ্বর নিরাময়ের জন্য তুলসি পাতা বা বাসক পাতার রসের সঙ্গের মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে খুবই ভাল কার্যকারিতা অনুভব করবেন।
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! আমাদের আজকের এই পোস্টটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে, তাহলে বেশি বেশি করে শেয়ার করবেন এবং অবশ্যই ফলোও বাটনটি ক্লিক করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ



0 Comments